কবিতা ভাবের এক অনবদ্য প্রকাশ। সাহিত্যের অব্যক্ত ধ্বনি শব্দ প্রতীকে মূর্ত হয়ে ওঠে কবিতায় । আজি কবিতায় হোক অবগাহন, কবিতায় কেটে যাক কিছুটা প্রহর! – এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে গত ১৫ই মে স্কুলের এল. এম. আর হলরুমে বসেছিল বাঙলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা-২০২৫ এর আসর। এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের মাঝে বাঙলা কবিতার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তোলা, মনের সুপ্ত ভাবনা সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে সাহসী হওয়া, আর সেই সঙ্গে তারা যেন বাঙলা ভাষার প্রতি অনুরাগে হৃদ্য হয়। মূলতঃ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের  মধ্যে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ সৃষ্টি ও কবিতার মাধ্যমে ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার, সঠিক উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি এবং শব্দের মাঝে লুকানো আবেগের বিচ্ছুরণ তথা ভাষার উন্নতি লক্ষ্যেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন।

এই আয়োজনের বাছাই পর্বে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছিলো। বাছাই পর্বে তারা  নিজেদের পছন্দের কবিতা আবৃত্তি করেছিল । শিক্ষার্থীদের উচ্চারণ, অভিব্যক্তি ও উপস্থাপনের উপর ভিত্তি করে , মোট ৩০ জন প্রতিযোগি বাছাই পর্বে নির্বাচিত হয়ে চূড়ান্ত পর্বে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল। চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতিকল্পে নির্বাচিত প্রতিযোগিদের নিয়ে পরবর্তীতে এক অনুশীলন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ৭ ই মে থেকে। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন তারিখে ও নির্ধারিত সময়ে অনুশীলন কার্যক্রমে অংশ নিয়ে নিজেদের প্রস্তুত করে চূড়ান্ত পর্বের জন্য ।

চূড়ান্ত পর্বের আয়োজনে আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের নির্বাহী পরিচালক জনাব জ্ঞানেশ চন্দ্র ত্রিপাঠী স্যার, সম্মানিত অধ্যক্ষ মিস নীতি ত্রিপাঠী মহোদয়।  প্রাথমিক শাখার সমন্বয়ক মিস আমরিন হোসাইন, সহ সমন্বয়ক মিস ফাহমিদা হায়দার। আমাদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন দায়িত্বরত শিক্ষকবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ।

এ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা ও সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বাংলা বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ-  কামরুন নাহার ফেরদৌসি, মাহবুবা খাতুন, ফাতেমা ইয়াসমিন, হেমা বড়ুয়া এবং পুরো অনুষ্ঠানের পর্বগুলো সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাধ্যা মণ্ডল ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আজওয়াদ বিন রাশেদ।

 চূড়ান্ত পর্বের অনুষ্ঠানটির শুভসূচনা হয় জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে। এরপর দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মজার এক বৃন্দ আবৃত্তি উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রতিযোগিদের অনুষ্ঠানস্থলে স্বাগত জানানো হয় । এরপর স্কুলের মাননীয় নির্বাহী পরিচালক জনাব জ্ঞানেশ চন্দ্র ত্রিপাঠী মহোদয় উদ্ভোধনী বক্তব্য দেন এবং প্রাথমিক শাখার অধ্যক্ষ মিস নীতি ত্রিপাঠী মহোদয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিতমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা নিজস্ব সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চার প্রতি গুরুত্ব তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করেন ।

কবিতা প্রতিযোগিতার আয়োজনে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রশাসনিক শাখার সুপরিচিত মুখ, কল্পতরু চৌধুরী, সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার – আইটি ,সহকর্মী সম্মানিত শিক্ষক অণিক ইকবাল , ক্যামব্রিজ কারিকুলাম , জুনিয়র শাখা। তাঁরা প্রতিযোগিদের মূল্যায়ন করেন কবিতার বিষয়বস্তু উপস্থাপন, উচ্চারণ, অভিব্যক্তি, মঞ্চ উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে। শিক্ষক কর্তৃক নির্বাচিত কবিতাগুচ্ছ থেকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত কবিতা আবৃত্তি করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সাবলীল উপস্থাপন শৈলী ও ভাবের দক্ষতা প্রদর্শন করে, যা উপস্থিত বিচারক ও শ্রোতাদের মনকে জয় করতে পেরেছিল। আবৃত্তি প্রতিযোগিতা শেষে বিচারকমণ্ডলী তাদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে সকল প্রতিযোগিদের অভিবাদন জানান এবং তাঁদের সাবলীল সুন্দর উপস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এরপর প্রাথমিক শাখার মাননীয় অধ্যক্ষ নীতি ত্রিপাঠী মহোদয় তাঁর বক্তব্যে তিনি শিক্ষার্থীদের অসাধারণ ও অনবদ্য সব কবিতা উপস্থাপনের প্রশংসা করেন । তিনি বিচারকমণ্ডলীদের ধন্যবাদ কার্ড দিয়ে সম্মাননা প্রদান করেন। সবশেষে তিনি উৎকণ্ঠিত শিক্ষার্থীদের মাঝে ফলাফল ঘোষণা করে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন ও সনদপত্র প্রদান করেন। তাঁর ফলাফল ঘোষণার পর শাখা সমন্বয়ক মিস আমরিন হোসাইন তাঁর সমাপনী বক্তব্যে প্রত্যেক প্রতিযোগিদের অনুপ্রেরণা যোগান ও তাদের সাহসী পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে অভিভাবকদেরও সন্তানদের প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

বাঙলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা-২০২৫ এ প্রতিটি শ্রেণি থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী নির্বাচন করা হয়েছিল। কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিজয়ী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে সনদপত্র সহ ছবি তোলার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতাটি আমাদের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্মরণীয় ও শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হিসেবে থাকবে। যেকোন প্রতিযোগিতা শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক ও সৃজনশীল বিকাশের একটি মাধ্যমও বটে। এই ধরনের আয়োজনের পেছনে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ছিল কোমলমতি শিশুদের শুধু পাঠ্যবইয়ের গণ্ডিতে আটকে না রেখে তাদের চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ঘটানো এবং সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করা। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শন ,ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক দক্ষতা প্রদর্শন করতে কবিতার মঞ্চ উপস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এমন আরো সৃজনশীল প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

Menu