বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের বীজ বপন হয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে, আর বাঙালির আত্ম-অম্বেষায় যে ভাষাচেতনার উন্মেষ ঘটে, ১৯৫২ সালের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি ‘ তার চরম রূপ ধারণ করে। বাঙালির অস্তিত্বের অন্তমূলে ফিরে গেলে দেখা যায় বাঙলা ভাষার আন্দোলন ১৯৫২ সালে হলেও এর সূচনা হয় ১৯৪৭ সাল থেকেই। তাই বাঙালির জীবনে এই একুশ অনেক রক্ত ঝরার শহীদদের স্মৃতিমাখা শব্দ । ভাষা শহীদদের সেই অমর স্মৃতিকে স্মরণ করতে সাইডার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বরাবরের মতো এ বছরও ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ বৃহৎ পরিসরে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পালন করেছে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। ক্যামব্রিজ কারিকুলাম, প্রাথমিক শাখার সমন্বয়ক জনাব এলেক্সসেস সেরাও এর তত্ত্বাবধানে ন্যাশনাল কারিকুলাম ও ক্যামব্রিজ কারিকুলামের চারটি শাখার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ভাষা শহীদ দিবস পালন করা হয়। সকাল সাড়ে আটটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমেই স্কুলের নির্বাহী পরিচালক ও অধ্যক্ষ জনাব জ্ঞানেশ চন্দ্র ত্রিপাঠী স্যার, উপাধ্যক্ষ মিস নীতি ত্রিপাঠী ম্যাম, সকল শাখা সমন্বয়ক, স্কুলের প্রশাসন বিভাগ,  অভিভাবকবৃন্দ সহ সকল শাখার শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারের বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। এ সময় ছাত্র- শিক্ষক সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল একুশের প্রথম গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। -সেই হৃদয়ছোঁয়া গানটি।

স্কুলের নির্বাহী পরিচালক জনাব জ্ঞানেশ চন্দ্র ত্রিপাঠী স্যার প্রথমেই তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে একুশের ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এরপরই  ক্যামব্রিজ কারিকুলাম শাখার হেড বয়- মোহাম্মদ নুসায়ের বিন রহমান ও ন্যাশনাল কারিকুলাম শাখার হেড গার্ল- আফিয়া জাহিন, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠ করেন। জুনিয়র শাখার উপাধ্যক্ষ মিস নীতি ত্রিপাঠী ম্যাম তাঁর নিজ মাতৃভাষায়, ভাষা শহীদদের প্রতি অনুভূতি ব্যক্ত করেন । অভিভাবকবৃন্দের পক্ষ থেকে শ্রেয়াস্বিনী দাশ’এর বাবা জনাব বিশ্বজিৎ দাশ, ভাষা শহীদদের প্রতি সন্মানসূচক বক্তব্য প্রদান করেন।

এরপর, স্কুলের বা্ৎসরিক সাহিত্য সাময়িকী ‘অলোক’ এর মোড়ক উম্মোচনের মাধ্যমে সূচিত হয় একুশের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের ২১শের চেতনায় উজ্জীবিত ও প্রণোদিত করতে এই দিনে স্কুল প্রকাশিত করে ‘অলোক’ নামে বাঙলা সাহিত্য সাময়িকী।

সকাল নয়টায় শুরু হয় শহীদের স্মরণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চারটি শাখার চার জন শিক্ষার্থীদের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় ছিল অসাধারণ সমন্বয়। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিল একুশের চেতনা সমৃদ্ধ কবিতা আবৃত্তি, গান, নাচ ও পাঁচ ভাষা শহীদদের কথামালার উপস্থাপন “ চেতনার অন্তমূলে আলো।”  সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি  শাখার শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিল প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। একুশের মঞ্চসজ্জায় ব্যবহৃত প্রতিটি চিত্রকলায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল একুশের চেতনাকে । যা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মনকে আত্ম-অম্বেষায় উজ্জীবিত করেছে। পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে শহীদদের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান দেখিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারির উদযাপনকে যথার্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের। আর এই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হয় আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের কার্যক্রম।

Menu