কবিগুরু রবি ঠাকুর বলেছেন…………………..

“সেই পুরাতন চোখে মাঝে মাঝে চেয়ো সখী,

উজলিয়া স্মৃতির মন্দির।

এই পুরাতন প্রাণে মাঝে মাঝে এসো সখী,

শূন্য আছে প্রাণের কুটির।

নহিলে আঁধার মেঘরাশি

হৃদয়ের আলোক নিভাবে,

একে একে ভুলে যাব সুর,

গান গাওয়া সাঙ্গ হয়ে যাবে।”

সময় পাল্টে গেছে। চোখের পলকেই অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে। সুখ জাগানিয়া দিনগুলি মনে পড়তেই ভেসে আসে, সেই রঙিন দিনগুলো- সেই সময় যাঁদের ¯স্নেহে আমরা লালিত হয়েছি। তাঁরা হলেন আমার শ্রদ্ধেয় বাবা-মা ও শিক্ষকগণ। এরই মাঝে পার করে এসেছি বহু পথ, কিছু সুখে, কিছু দুঃখে। স্মৃতিগুলো সব অবগুন্ঠনে আছে বুকের অতল গভীরে, নাড়া দিলেই ঝুরঝুর করে ভোরের শিউলির মতো ঝরে। খুব মনে পড়ে স্কুল জীবনের কথা, যখন স্কুলের মাঠটিতে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, খেলা আর শিক্ষকদের চোখ রাঙানো বকুনি খেতাম। সবই যেন আজ স্মৃতি। সংসারের এই তো ধর্ম আমরা জড়িয়ে যাই একেক সম্পর্কের সাথে বড় মায়ায়-মমতায়, বন্ধনে আর নির্ভরতায়, তারপর পথ চলা। এই পথ চলার আর একটি শব্দ ‘সমঝোতা’। যে যত মানিয়ে নিতে পারবে তার জীবনের গতি হয়তো ততই সহজ হবে এবং একান্ত চাওয়া পাওয়ার তালিকাটা হয়তো মলিন হবে। কিন্তু জীবনের বন্ধুরা বড়ই অমলিন। মনে পড়ে, বন্ধুদের সাথে কলেজের সেই ক্যান্টিনে চা খেতে বসে রেকর্ডে বাজতো মান্না দে’র সেই গান কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই …..। সত্যিই তো সেই বন্ধুরা আজ কোথায় ব্যস্ত হয়ে গেলো আর শ্রদ্ধেয় “মান্না দে” ও আজ চিরনিদ্রায় শায়িত। আমরা এখনো সেই পুরনো বন্ধুদের পেলে হারিয়ে যাই নষ্টালজিয়ায়, খুঁজে পাই একান্ত হওয়ার স্বাদ। বড় ব্যস্ত জীবনের মাঝে কিছুক্ষণ হলেও ঝরা শিউলি ফুলের গন্ধ ও শব্দ শুনি। আজো অবুঝ বালকের সবুজ ঘুড়িতে ধরা আছে জীবনের স্বপ্ন।

সারা পৃথিবী জুড়ে আজ যে অস্থিরতা, অবিশ্বাস, হত্যা, ধ্বংস তা কিসের ইংগিত বহন করে? আমরা কি তাহলে আমাদের সন্তানদের অঙ্কুরিত স্বপ্নগুলো নিজেরাই ধ্বংস করে দিচ্ছি? নক্ষত্রের পতনতো হবেই আজ হোক আর আগামীতে। সন্ধ্যা ঘনাবে তার জন্য আজ তো পথ বন্ধ করতে পারি না। আমাদের যতটুকু আলো আছে আমাদের সেই শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কাছ থেকে যে আলোর ছটা পেয়েছিলাম তা কিছুটা হলেও যদি, সে আলো ছড়াতে পারি আমাদের প্রিয় সোনামনিদের মাঝে। সামান্যটুকু হলেও কারো মুখের হাসিটুকু ধরে রাখতে যদি পারি- এই ধরণীতে আসা তবেই তো সফল হবে।

পাপড়ি নন্দী

বিভাগীয় প্রধান, বাংলা (এনসি)

4 Comments.

  • পাপড়ি দি,,,আমরা যেকোনো লিখা ইংরেজিতে দেখতে দেখতে এতই অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে, বাংলা লিখা দেখাই যায়না। আজ আপনার লিখাটা পড়ে এতই ভাল লাগছে যে বলে বুঝাতে পারবনা।আমার ও সেই স্মৃতিময় দিনগুলো চোখে ভেসে উঠছে। আর ইচ্ছে করছে এখনি ফিরে যায়।
    খারাপ, হিংসা,ঝগড়া, ধংস এসব হয়ত আমরা মুছে ফেলতে পারবনা কিন্তু আমাদের বাবা মা আর শিক্ষকদের দিয়ে যাওয়া কিছু মুল্যবোধ,সৌজন্যতা আর আশির্বাদের মাধ্যমে আমাদের সর্বাত্নক দিয়ে যেন আমাদের আগামি প্রজন্মকে ভালটা দিয়ে যেতে পারি সে আশায় করব। আজ সত্যি আমাদের বিভাগীয় প্রধানকে মন থেকে ধন্যবাদ দিচ্ছি এত সুন্দর একটি লিখা প্রকাশের জন্য।

  • Pian Sen Gupta
    March 12, 2017 7:10 am

    সুন্দর লেখনী এবং অসাধারণ শব্দচয়ন।রবি ঠাকুর আমাদের সমৃদ্ধশালী করে গেছেন তার সৃষ্টিশীল মেধা ও মননে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের কে কিছু সময়ের জন্য হলেও শৈশব এ ফেরত নেয়ার জন্য।আশা করছি আরও অনেক সুন্দর কিছু উপহার দেবেন ভবিষ্যতে…সেই অপেক্ষাই রইলাম।

  • Troyee Barua
    March 12, 2017 7:52 am

    Very nostalgic writing! I am extremely impressed with your writing skill.

  • সৌমেন নন্দী
    April 1, 2017 10:13 am

    সময় পেলেই এক ছুটতে চলে যাই স্মৃতির শৈশবে আর জাবর কাটতে কাটতে ভাবি, বেশ তো ছিলাম। তোমার এই লেখনী আরও বেশি করে ভাবিয়ে তুলছে আবেশ ছড়ানো শিশুসুলভতাময় দিনগুলো.. কৈশোরের রোমাঞ্চময় ভালোলাগাগুলো… তারুণ্যের পেলব মাখা অনুভূতিগুলো…। দিদি,দারুণ লিখেছো তুমি..! অভিনন্দন। আরও লেখা চাই কিন্তু এভাবে আবেগী করে তুলবার জন্যে! 🙂

Menu